Tuesday, June 23, 2015

অবৈধ ক্যানভাস - কবিতা

দেখেছো তুমি হিংস্র-শ্বাপদের
খুবলে খাওয়ার দৃশ্য?
ক্ষুরাধার নখ বসিয়ে দিয়েছে-
উহ ! আর্তনাদ কাঁপিয়েছিলো আরশ
আর চেয়ে দেখেছে নির্লজ্জ, কাপুরুষ বিশ্ব ।
দেখতে খুব মজার,
খুবলে খাওয়ার দৃশ্য !
কোথায় কোথায় দিয়েছে কামড়
আর কোন অঙ্গকে রাঙ্গিয়েছে
ধর্ষকশিল্পীর আঁচড়?
ক্যানভাসের প্লট কেমন ছিলো,
কেমন ছিলো রঙ্গের খেলা-
লাল-নীলের মিশ্রণ?
চোখ ফেটে ঝর্ণার প্রবাহ,
আহা, কী রূপের নির্ঘন্ট !
নিতম্বে সবুজ শাড়িটা সিক্ত-
রক্তজবার প্রস্রবণ ।
অসহ্য চিৎকার দিচ্ছে ‍সুড়সুড়ি,
আনন্দ দিচ্ছে বাঁচার আঁকুতি-মিনতি ।
হাত-পায়ের ছোড়াছুঁড়ি দেখে
ধর্ষক নিজেরে ভেবেছে বীর !
আর দর্শক? চোখের ধর্ষণে,
করতালির কর্ষণে
সাহস দিয়েছে যথেষ্ট,
এবার গগন বিদারী আর্তনাদ !
ক্যানভাস নীলে নীলাভ,
জাতি মিলে করছে ধর্ষণ-
হে ধর্ষক, তুমি বীর শ্রেষ্ঠ !

কে জানি বললো, ঢের হয়েছে-
বোধহয় বেঁচে নেই, চল ফুটি !
‘আজ আমাদের ছুটি ও ভাই,
আজ আমাদের ছুটি’ ।
বিনোদনের খোরাক এখন ব্যর্থ;
যে যার মতো চলে গেছে-
রেখে গেছে কিছু চিহ্ন
কেউ পায়ের কেউবা তুলির ।
এটা গাঁজাখুড়ি গল্প,
বিশ্বাস করোনা-
পড়ে রয়েছে নিথর একটা দেহ !

Sunday, June 21, 2015

গণতন্ত্রের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে, আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই

গণতন্ত্রে ‘জনগণের স্বাধীনতা’, ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’, ‘জনগণের তন্ত্র’ ইত্যাদি শব্দগুলো যতোটা মুখরোচক ও লোভনীয়ভাবে প্রকাশ করা হয় আদতে গণতন্ত্রে সরকার-প্রশাসন-আইন সবই পরিচালিত হয় পুঁজিপতি ও বুর্জোয়া শ্রেণিটির দ্বারা । তাদের খায়েশ পূরণের জন্য তৈরি করা হয় নতুন নতুন আইন-খসরা । সেই আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে জনগণের শ্রম বিক্রি হয় পানির দামে । অর্থ্যাৎ পুঁজিপতি ও বুর্জোয়া শ্রেণিটি খুব স্বল্পদামে শ্রম পেয়ে নীট মুনাফার পরিমাণটা দিনেদিনে বাড়িয়েই চলে । ভ্যাটের মাধ্যমে জনগণের পকেট খালি করে বাজেটের স্তুপ করা হয়, যা গণতন্ত্রের বাহকদের খরচ মেটাতেই সিংহভাগ ফুরিয়ে যায় । বাকি যা থাকে তা টেন্ডারবাজদের হয়ে শ্রমিক পর্যায়ে আসতে আসতেই মোট বাজেটের অবশিষ্ট মাইনাস হয়ে যায় । গণতন্ত্র এখানে আরেকটা দাবার গুটি বসায় । বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে প্রস্তাবিত প্রজেক্ট সম্পন্ন করা । প্রজেক্ট কতটা সম্পূর্ণ হয় তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থাকলেও বৈদেশিক ঋণের ভারটা কিন্তু জনগণের উপরই বর্তায় । গণতন্ত্রের সরকার তো আর জমিদার না, থাকলেও নিজের পকেট থেকে কে সে ঋণ শোধ করতে যাবে ! সমাধান তো করতেই হবে । যেহেতু গণতন্ত্র জনগণের তাই ঋণশোধটা জনগণকেই করতে হবে । হু হু করে বাড়িয়ে দেয়া হয় ভ্যাট । নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনতে পদে পদে হোঁচট খেতে হয় জনগণকে ।

জনগণ এমন এক তন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলো যে তন্ত্র জিইয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত রক্ত পানি করতে হচ্ছে । জনগণের নিমিত্তে যে সরকার-আইন-প্রশাসন তৈরি হলো সেটাই এককালে পুঁজিপতি-বুর্জোয়াদের খাদেম হিসেবে নিযুক্ত হলো । একজন পুঁজিপতি তার নিরাপত্তার জন্য বন্দুক-দেহরক্ষী রাখতে পারে, একজন মন্ত্রী তার নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনী রাখতে পারে কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ রাতের বেলা চোর-বাটপার-সন্ত্রাস-ছিনতাইকারী-খুনীর হাত থেকে রক্ষার তাগিদে নিরাপত্তাস্বরূপ হালকা গড়নের কোনো অস্ত্র রাখতে পারেনা । অথচ রাজনৈতিক ছাত্র সন্ত্রাস, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিদের হাতে দা-চাপাতি-চাইনিজ কুড়াল-হকিস্টিক-পাইপ গান রাখা আপাত চোখে অপরাধ হলেও তার অনুমতি মেলে রাজনৈতিক দাদাদের চোখের ইশারায় । যদিও ভুলক্রমে কখনো সেই হায়েনা-কুকুরদের হাত থেকে নিরাপত্তার কারণে একটা চাকু হাতে নেয়া হয়, তখন জনগণকে মুখোমুখি হতে হয় প্রশাসনের, যে প্রশাসন চলে তারই রক্ত করা পানি দিয়ে । ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’ - প্রশাসনীয় এ বাক্যের সৃষ্টিই হয়েছে জনগণকে আজীবন বেসামরিক বানিয়ে নিষ্পেশনের জন্য । অথচ দুর্নীতি-ঘুষের মাধ্যমে সন্ত্রাসী-খুনী-ধর্ষক-চোরবাটপারদের ছেড়ে দেয়ার বৃত্তান্ত সবার জ্ঞাত ।

অপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য জনগণ প্রতিষ্ঠা করেছে আইন মন্ত্রণালয় । খোদ একটা ঠুনকো মামলার জন্য আইনব্যবসায়ীদের হাতে পড়ে জনগণকে আবারো মাসুল দিতে হয় । এমনটি হরহামেশায় ঘটেছে যে, একবিঘা জমির সুরাহার জন্য দুইবিঘা সমমূল্যের টাকা-কড়ি খুইয়েছে জমির উপযুক্ত ভাগীদার । শেষ পর্যন্ত জমি চলে গেলো টাকাওয়ালা ব্যক্তির হাতে ।

সরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালগুলো চলে জনগণের টাকায় । এখানকার জাঁদরেল ডাক্তারগুলোকে তৈরি করা হয়েছে জনগণের খরচায় । ডাক্তারগুলোর বেতনও দেয়া হয় জনগণের টাকায় । অথচ যে লোকটি প্রতিনিয়ত গোপনে-প্রকাশ্যে ভ্যাটের শিকার হচ্ছে সেই কিনা উপযুক্ত চিকিৎসা পায় না তাদের কাছে । ভালো চিকিৎসা চাও? পয়সা খরচ করতে হবে । যেতে হবে প্রাইভেট চেম্বারে । ওষুধ কিনতে হবে দামি দামি । বেশ খরচা আছে । অর্থ্যাৎএখানেও পুঁজিপতি-বুর্জোয়াদের খাদেমগিরি । অথচ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতেই জনগণের রক্ত পানি করে গণতন্ত্রের প্লাটফর্মে দাঁড় করানো হয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা ।

চোখ-কান খুলে বিবেকটাকে নাড়া দিয়ে দেখুন না একবার, গণতন্ত্র কতটা প্রতারণাময় ! ব্যক্তিবিশেষে দোষারোপ করে লাভ নেই । কারণ তারা প্রত্যেকেই গণতন্ত্রের ষড়যন্ত্রের শিকার । আর কত পুঁজিপতি-বুর্জোয়া শ্রেণিটির গলা ভিজাবেন নিজের রক্ত দিয়ে, নিজের ঘাম দিয়ে ! আর কত প্রতারিত হবেন !

আসুন সিস্টেমটাকে পাল্টাই ।

Tuesday, June 16, 2015

আমি খুঁজে পেয়েছি সাত সাগরের মাঝি আর পাঞ্জেরীকে

আমি খুঁজে পেয়েছি সাত সাগরের মাঝি আর পাঞ্জেরীকে......

আমার দুই পাড়ের কান্ডারী যে স্রষ্টাপ্রেরিত - তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই । অথৈ সাগরে যখন সমগ্র যাত্রী দিশেহারা ঠিক সেসময়ে স্রষ্টা পাঠালেন হাদী (পথপ্রদর্শক)-কে  । জাহাজের কাপ্তান হয়ে তিনি সাগর পাড়ের সূক্ষ্ম ও সঠিক দিক নির্দেশনা দেখালেন  । আমি বিভোর হয়ে শুধু চেয়ে রইলাম  । কিভাবে সম্ভব এমনটি? অন্তর্চক্ষুসহ সব দিবালোকের ন্যায় স্পষ্টবাদী হতে শুরু করলো, ঘুঁচলো অন্ধকার । একটা একটা করে জট খুলতে লাগলো দ্বন্দ্বের, সংঘর্ষের, কৌতূহলের, সমস্যার  । যে সেতারা একসময় অসহ্য লাগতো, সেটাই আজ যাত্রাগমনের চিহ্ন  ।
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় এমামুয্যামান মুহাম্মাদ বায়াজীদ খান পন্নী
আধেক পথে গিয়ে যাত্রীসমেত হতাশ । কাপ্তান চলে গিয়েছেন পরপারে । স্রষ্টা মোদের সাথে এ কি করলেন? আমরা আবারো হতাশ । ওপাড়ে ভিড়বো কী করে, কিছুই তো জানিনা । কম্পাস, ম্যাপ, স্পিডোমিটার সবই দুর্বোধ্য হতে লাগলো  । অজানা অচেনা সাগরের মাঝখানে যাত্রীরা বসে কাঁদছে । হে স্রষ্টা, কাপ্তান পাঠাও । হাল ধরবে কে? আমরা যে অসহায় যাত্রী  ।
হেযবুত তওহীদের বর্তমান এমাম হুসেইন মুহাম্মদ সেলিম
সময় লাগেনি । পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি পাঠালেন যুবা কাপ্তান । শক্ত করে হাল ধরলেন জাহাজের । ফের ঠিকঠাক চলতে শুরু করলো জাহাজ রাত্রিভেদ করে  । প্রাণ ফিরে পেলো যাত্রীসকল  । আনন্দের স্রোতধারা স্পর্শ করছে হৃদয় । নব উদ্যমে জোয়ার-ভাঁটা সব ভেদ করে চলছে মহাকালের জাহাজ ।

যাত্রীর সবার পিছনের দিকে আমি বসে বসে অবাক হচ্ছি- কী করে সম্ভব এ কঠিন জাহাজকে অথৈ সাগর পাড়ি দিয়ে এতো বেশি নৈপুণ্যতা আর নির্ভুলতার সাথে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া !

Thursday, June 11, 2015

দুটি কবিতা “ভাবছো যেমন তেমনটি না” ও “আমি বেশ ভালোই আছি”

ভাবছো যেমন তেমনটি না

ভাবছো যেমন তেমনটি না,
সুখের ভিতর আছে কান্না,
কান্নার ভিতর আছে হাসি,
হাসির ভিতর আছে-
দুঃখ রাশি রাশি !
হাসছি আমি হাসছো তুমি,
হাসছে অবাক পৃথিবী-
সব হাসিতেই মিশে আছে
ভয়ংকর সব ছলচাতুরী ।
হাসির মাঝে সুখ দেখেছো?
ঠোঁটের কোণে স্বপ্ন এঁকেছো?
সুখ আবরণ খুললে মেলে
ভয়ংকর সব যন্ত্রণা !
ভাবছো যেমন তেমনটি না,
গল্প গুজব এমনটি না ।
সব হারানোর হারিয়ে যাবে,
কাল হায়েনা চিবিয়ে খাবে,
চোখের কোণে জমবে জল,
কোথায় আর লুকাবে বল?
কেনো এই মিথ্যে মিথ্যে পরিণয়?
কেনো নিজের সাথে এতো অভিনয়?
দক্ষ নই আর সখ্য নয়,
তবু দর্শকেরা স্তব্ধ রয় !
করতালিতে মুখরিত নাট্যমঞ্চ,
ভাবছি আর না !
ভাবছো যেমন তেমনটি না,
গল্প গুজব এমনটি না ।




আমি বেশ ভালোই আছি 

‘আমি বেশ ভালোই আছি’
ঘটা করে বলার কী প্রয়োজন?
‘আমি বেশ ভালোই আছি’
হঠাৎ এই আয়োজন?
‘আমি বেশ ভালোই আছি’
ধ্যাত্তেরি ধুর ছাই !
বিরক্তিকর যত্তসব মশা-মাছি,
বারবার শোনার সময় নাই ।
চললুম, পথ ধরলুম মোর পথে-
গঞ্জে যাবো, স্বর্ণ দিবো নথে;
মায়ের বিরাট বিরাট বায়না-
ঘরে লক্ষী নিয়ে আয় না ।
কত্ত বড় বাড়ি, লাগে ভীষণ ফাঁকা-
সন্তুরে, কখন পাবো পুত্রবধূর দেখা?

মিলিয়ে যায় সন্তুরা
গঞ্জের হাটের ভীড়ে,
আর কুলীন ঘরের মেয়েরা
সন্ধ্যা আনে বসে নদীর তীরে-
‘আমি বেশ ভালোই আছি,
কষ্ট কিসের অপয়া?’
ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে ।

১৪.০৫.২০১৫ খ্রিঃ

Saturday, June 6, 2015

দাঁড়াও পথিক!

হে দ্রুতশীল পথিক!
একটু দাঁড়াও । তুমি যে পথে হাঁটছো, এই পথ কি ঠিক? যার পানে অন্ধের ন্যায় ছুটছো, সে লক্ষ্য কি ঠিক?
তুমি কি জানো, কিসের নেশায় কার পেছনে ছুটছো?
নিজেকে প্রশ্ন করেছো কখনো তুমি আসলে কী ও কেনো?
যদি আমার প্রশ্নে তোমার ভ্রুক্ষেপ না পড়ে অথবা মনে উৎসাহের সৃষ্টি না হয়, তবে "তুমি অন্ধ-মূক-বধির । তোমার অন্তরে স্রষ্টা মোহর মেরে দিয়েছেন (পূর্বোক্ত কোনো বিশেষ অবহেলার জন্য)।"

মানুষ সামাজিক জীব । কথাটা অনেক পুরোনো । তারপরেও বারবার বলতে হয় স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য । প্রথমে তোমার কথাই বলি । সমাজে তোমার গুরুত্ব কতটুকুন? তুমিইবা সমাজকে কী দিচ্ছো? কিছু একটা মাথায় আসছে হয়তো । তবে সেটা ধোঁয়াশা ।

আমার সাথে চলো ।দয়া করে প্রশ্ন করবে না কোথায় নিয়ে যাচ্ছি !
তবে দুশ্চিন্তার কারণও নেই । কারণ তোমাকে সশরীরে জোরপূর্বক কোথাও নিয়ে যাবো না ।

"শান্তি" নামের সমসাময়িক একটা দেশের কথা বলছি। এখানে সকল ধর্মের সকল শ্রেণির মানুষের বসবাস। ইদানীং লক্ষ্য করলাম এখানে সকলধরণের অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিদিনের পত্রিকায় গুম-খুন-ধর্ষণের চিত্র ! নিজের মেয়েকে বাবা করছে ধর্ষণ! মা তার সন্তানের লালসার স্বীকার ! ভাই ভাইয়ের হাতে হচ্ছে খুন। ছাত্রের হাতে মার খাচ্ছে শিক্ষক ! বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা শুধুই বাড়ছে । রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার সাধারণ মানুষেরা! ভারসাম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শ্রেণীবৈষম্যের অভাব নেই । কেউ না খেয়ে মরছে আর কেউ বিরাট প্রাসাদে নিদ্রায় দিন কাটাচ্ছে । তার সাথে বেড়ে চলেছে সকল ধরণের অবক্ষয় ।

চৌধুরী বাড়ির কাজের বেটি রহিমার বড় ছেলে ভালো রেজাল্ট নিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন, অনার্স-মাষ্টার্স করে চাকরির অভাবে বেকার । চাকরি নিতে ঘুষ লাগে । সেদিন রিক্সাচালক রমজান আলীর ছোট মেয়েটা স্কুল থেকে ফেরার পথে রক্তমাখা ছিন্নভিন্ন পরনের কাপড় নিয়ে বাড়ি ফিরলো । সন্ধ্যাবেলায় শুনলাম মেয়েটা নাকি মারা গেছে । আমাদের বাড়ির সামনে দিনমজুর কলিমদ্দিন একটা পর্ণকুটিরে হাঁপানি রোগে অনেকদিন ধরে ভুগছে । টাকার জন্য ভালো চিকিৎসা করতে পারেনি । বেচারাকে গতকাল গোরস্থানে রেখে এলাম । ও পাড়ার গিট্টুদের বাড়িতে গতকাল পুলিশ এসেছিলো। মাদকদ্রব্যের চোরাচালানের খবরটা কিভাবে জানি পুলিশের কানে গিয়েছিলো । মাংস-পোলা আর মানিব্যাগ ভর্তি করে পুলিশরা চলে গিয়েছে । গিট্টুদের কিচ্ছু হয়নি । আমি যে হাইস্কুলে পড়ি স্যারেরা ক্লাস করায় কৌশলে যাতে স্যারের কাছে বারোমাস প্রাইভেট পড়তে হয় । নাহিদ গতবার প্রাইভেট না পড়ায় স্যার ওকে ফেল করে দিয়েছে । কিছুদিন আগে আমি এইচএসসি পাস করলাম । কোচিং ছাড়া নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া যায়না । আমার দরিদ্র পিতাকেও শেষ পর্যন্ত বড়লোকের ন্যায় কাড়িকাড়ি টাকা ব্যায় করতে হলো ঋণ করে । ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি ওখানে রাজনীতি আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী শেখায়, দাবি আদায়ের নামে জ্বালাও পোড়াও হরতাল-পিকেটিং শেখায়। আমার বন্ধুর হাতে একটা ককটেল ছিলো । সে নিক্ষেপ করতে গিয়ে একটা বাচ্চার শরীরে পড়ে । পরদিন বাচ্চাটা বার্ণ ইউনিটে মারা যায় । এইতো কিছুদিন আগে ক্যাম্পাসের সামনে কয়েকটা ইজিবাইক ভাঙ্গলাম নিজের হাতে । তাদের দোষ আমাদের একজনের গায়ে হাত তুললো কেনো ! তাই সব ভেঙ্গে দিয়েছি ।
জানো পথিক, আমাদের সম্মানিত ভিসি স্যারকেও তালা মেরে রাখতে আমাদের কুন্ঠাবোধ হয় না । ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক আমরা একরকম ভুলেই গিয়েছি!
ঐদিন মেডিকেল কলেজে গিয়েছিলাম । বারান্দায় রোগীরা ছটফট করছে । ডাক্তার ছাত্র ছাত্রী কেউ নেই । পরে শুনলাম তারা নাকি কয়েকদিন অবরোধ-বিক্ষোভ ডেকেছে । যতক্ষণ না সরকার তাদের দাবি দাওয়া না মেনে নিবে , এ অবরোধ-বিক্ষোভ চলবে । তাতে রোগীদের প্রাণ থাকুক আর যায় যাক !
নির্বাচনের আগের দিনে রায়পাড়ার হিন্দু বাড়িতে আগুণ লাগিয়ে দিলো উগ্রপন্থীরা । গেলো এসএসসি পরীক্ষায় নাকি প্রশ্নপত্র যত্রতত্রে পাওয়া গিয়েছে । দেখি গোবর গণেশটা আজকাল মেট্রিক পাসের মিষ্টি খাইয়ে বেড়াচ্ছে ।

জানো পথিক! আমার বাবা আমাকে কেনো এতো কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছে ? চাকরি করবো । সমাজে আমার একটা ভালো জায়গা হবে । বাবা মা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ! আমি নাকি অনেক বড় হবো ! আমাকে দেখে এখন আমাদের পাড়ার ছোটো ছোটোরাও লেগে গিয়েছে পড়াশুনায় । প্রাইমারি থেকেই এই কোচিং সেই কোচিং ! নিশ্চয় তারা একদিন আমাকে কেটে ফেলবে । বুঝলেন তো এখন সবাই পড়ালেখা করে অর্থের জন্য, সম্মানের জন্য । শিক্ষিত হয় কিন্তু জ্ঞানী হয়না । সমাজের অন্যায় অত্যাচার তাদের চোখে পড়েনা । প্যান্ট কোর্ট পড়া মাষ্টার্সবাবু সুদ-ঘুষখোর শশুড়ের মেয়েকেই বিয়ে করে । অথচ এই সুদ ঘুষখোরের জন্যই যে রুনুঝুনুদের বাবা মা গলায় ফাঁস দিয়েছে, তা আর বিয়ের দিন চোখেই পড়েনা।
আমার বোনটার বিয়ের বয়স হয়েছে । পাত্র অনেক ,তবু খুঁজে পাচ্ছিনা । যৌতুকের টাকা এতো পাবো কী করে? সরকার আইন করলে কী হবে! ভালো পাত্র যে টাকা ছাড়া পাগড়িটা মাথায় দেয়না, তাতো কেবল পাত্রীপক্ষের লোকেরাই ভালো করে জানে । ফেন্সী চাচীর মেয়েটাকে গত তিন বছর আগে বিয়ে দিয়েছিলো । বরতো এই সেই বলে কতো টাকা যে নিলো ।এখনো চাচ্ছে । তারপরেও যদি ছেলে ও ছেলে পক্ষের মন পাওয়া যেতো !

এইতো সেদিনের কথা । ফেলানী গিয়েছিলো পাশের দেশে উঁকি মারতে । বিএসএফ দিলো মেরে । এভাবেই প্রায় প্রতিদিন লাশ হয়ে ফিরে আসে ফেলানীরা ।
জানো দ্রুতগামী পথিক? আজকাল প্রাপ্তবয়স্কের একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে পছন্দ করে বিয়ে করতে চাইলেও ধক্কল সামলাতে হয় অনেক। পছন্দের মূল্য না দিয়ে এ সমাজ ছিঃ ছিঃ করে। ব্যর্থতায় কতো ছেলেমেয়ে যে কেওড়াতলার রশিতে ঝুলে!

সমাজের অসঙ্গতি আর কতো বলবো ! হাঁপিয়ে গেছি । শেষ করা সম্ভব নয় । ও হ্যা , তোমার সময় যে নষ্ট করলাম! কোথায় যেনো ত্বরা করে যাচ্ছিলে? মাঝপথে আমি বাঁধা দিলাম । আসলে আমিও একই পথের পথিক ছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ পথে আর হাটবোনা। রাস্তাটায় অনেক বাঁক। আর পথের শেষে বিশাল আবর্জনার স্তুপ। আচ্ছা রাস্তার এতো বাঁক তোমার চোখে পড়লোনা? নাকি চোখ বন্ধ করে দৌড়াচ্ছো! কী বললে? কালের স্রোত তোমাকে তাড়া করছে? তাই বলে ধ্বংসের পোতাশ্রয়েই নিবে শেষ আশ্রয়! চললাম বস ।আমি যে মহাকাল!

লেখক
ইলিয়াস আহমেদ
১৪.০৬.২০১৪ খ্রিঃ

ভোগবাদ ও স্বার্থকেন্দ্রিকতা- উদ্দেশ্যচ্যুতির আরেক রূপ

শুধু একটা কারণে, মাত্র একটা কারণে, মানুষ অসীম স্বার্থকেন্দ্রিকতার দিকে দ্রুতগতিতে ছুটছে এবং খুব দ্রুতগতিতে ।এ স্বার্থকেন্দ্রিকতা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, নাড়ীসম্পর্কও আজ শুধু রক্তেই গড়াগড়ি করে, নাড়ী ভেদ করে তা আত্মায় প্রোথিত হয়না ।

অসীম চাহিদাকে সামনে রেখে তিনমোহনার বাড়ি নিয়ে দুচাকার মানব নামের গাড়িটি বেশিদূর এগুতে পারেনা । তাইতো পরতে পরতে গাড়ি হেলেদুলে চলে । ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় খাদে পড়ে, আবার উঠে । কিন্তু এভাবে আর কতদিন?

মানবজনম আজ বড়ই ভারের! আজকের এ ভার দেখে নিশ্চয় কোন দেব-দেবীরা মানব হয়ে জন্ম নেবার ইচ্ছে করবে না?
কিন্তু কী সে কারণ, যার জন্যে মানুষ আজ গাধায় পরিণত হয়েছে?
যেদিন থেকে মানুষ ভুলে গেলো তাকে স্রষ্টা কী উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছে, সেদিন থেকেই সে আজকের মানুষরুপী খচ্চরে পরিনত হয়েছে ।

বর্তমান মানুষের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের দিকে তাকালে অতি সহজে প্রতীয়মান হয়, তাকে কেবল ভোগবাদের মূল্যায়ন ও প্রতিফলন করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে । তাই সে কাকের মতো আবর্জনা খেতেও দ্বিধা করেনা ।

মানচিত্রের একাত্মতা, মানবতার দায়িত্ববোধ, শিক্ষার মনুষ্যত্ব, সত্যের সাক্ষ্য, সৌন্দর্য্যের প্রশংসা, নারীর কোমলতা, শিশুর পবিত্রতা, পুরুষের বলিষ্ঠতা, যৌবনের অদম্যতা, বার্ধক্যের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা সবই আজ ভোগবাদী মানুষের কাছে ভোগ্য । পৃথিবীতে যতো গুণবাচক শব্দ আছে, সবই যেনো পণ্যের বিজ্ঞাপন ।

ভোগবাদের সাথে স্বার্থকেন্দ্রিকতার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বলে মানুষ প্রতিনিয়ত নিজের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অবিশ্রান্তভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে ।এ চেষ্টা বৈধ না অবৈধ, তা স্বার্থকেন্দ্রিকতার কাছে মোটেই বিবেচ্য নয় ।
ঠিক এ কারণে, পৃথিবীতে বেড়ে চলেছে নিত্য নতুন অপরাধ । কোন আইন দিয়ে তা ঠেকানো যাচ্ছে না । কারণ আইন মানার মানবিক মূল্যবোধও ভোগবাদের বাজারে স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয়ে গেছে ।
সকল অপরাধতো কমছেইনা বরং দিনে দিনে বেড়ে চলেছে গুণোত্তর ধারায় । অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে নিউক্লিয় ফিউশন গতিতে এগিয়ে চলছে ।

ভোগবাদের প্রতিধ্বনি আমাদের চিন্তাজগতে ঢুকে অদ্ভুত প্রশ্নের সৃষ্টি করে জড়বাদকে আরো প্রবল করছে ।
সমাধিকার আদায়ের নামে নারী তার নারীত্ব হারিয়ে পুরুষে পরিণত হতে বড়ই আগ্রহী । এ আগ্রহের মূলে যে ভোগবাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে তা কি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার খুব প্রয়োজন?

আজকের দুনিয়ায় স্বার্থকেন্দ্রিকতার প্রতিযোগিতায় সবাই সবাইকে প্রতিযোগীই ভাবে, রাসূল সাঃ এর আসহাবদের মতো সহযোগী ভাববার সময় নাই । কারণ, তাঁর আসহাবরাতো কেউ ভোগবাদী স্বার্থকেন্দ্রিকতার জন্যে বেঁচে ছিলেন না । তাঁদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই ছিলো এক স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা । যাঁর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এতো মহৎ, সে কখনোই সমাধিকার দাবি আদায়ের জন্যে টু শব্দটাও উচ্চারণ করতে পারে না । নারী ও পুরুষ তাঁদের নিজস্ব স্থানে থেকেই সেই মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করেছে । তাই বলে নারী যে পুরুষের আঙ্গিনায় পা দিতে পারবেনা, তা কিন্তু ছিলোনা । পরিস্থিতি সাপেক্ষে নারী সাহাবী আম্মারা রাঃ দুধর্ষ যোদ্ধাতে পরিণত হন । সে শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে রাসূল সাঃ এর সহধর্মিণী আয়েশা রাঃ উষ্ট্রের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন, যার নেতৃত্বে পুরুষ সেন্যরা ছিলো ( এ যুদ্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে আমাদের কথা নয়, বরং লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো রাসূল সাঃ এই শিক্ষায় দিয়েছিলেন যে, প্রয়োজনে নারীরাও পুরুষের কাতারে এসে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে)।

যাই হোক, আমরা হয়তো এতটুকুন অন্তত বুঝেছি যে, আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ভুলে যাওয়ায় সকল কর্মকান্ডের যথার্থতা, প্রায়োগিক ক্ষেত্র, প্রতিক্রিয়া উল্টো হয়ে গিয়েছে, যেটা কিনা আজকের চূড়ান্ত ভোগবাদ-স্বার্থকেন্দ্রিকতায় এসে ঠাঁয় নিয়েছে ।
তাই আমরা বেঁচে থাকি ভোগবাদের জন্য । এই হয়েছে আমাদের উদ্দেশ্য ।
কিন্তু সত্যানুসারীদের ভোগবাদের জায়গা পৃথিবী না, স্বর্গ ।

- ইলিয়াস আহমেদ

লাগামহীন যান্ত্রিক প্রগতি এবং আমাদের ভবিষ্যত

জানিনা সবারই কি এমন মনে হয় কিনা বা কারো চিন্তায় এসেছে কিনা সেটাও বুঝতে পারছিনা । তবে এটা নিশ্চিত যে, যেহেতু আমার চিন্তায় ব্যাপারটা বারবার এসেছে সেহেতু সবারই না আসুক, সমগ্র পৃথিবী ঘুরে বেশ কয়েকজন পাওয়া যাবে যারা ব্যাপারটাকে আমার মতোই ভেবেছে বা ভাবছে । এ ভাবনা কতটুকুন বোকামির সেটাও আন্দাজ করতে পারছিনা । বোকারাইতো বোকামি করে । আমিও না হয করলাম ।
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আমাদের অনেক দিয়েছে । প্রতিনিয়ত দিয়েই যাচ্ছে । অথচ তার হর্তা-কর্তা কিন্তু আমরাই । বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সরাসরি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো প্রত্যাখান করে আমি মূলত সাময়িকভাবে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে এর প্রগতির দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি । যে প্রগতির কথা বলছিলাম, তা আজ লাগামহীন ঊর্ধগামী পাগলা ঘোড়াতে রূপ নিয়েছে । আর সে পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আমরা যে কোথায় যাচ্ছি, তা মুহূর্তেই ভুলে যাচ্ছি । কারণ কিছুই না, ঘোড়ার দ্রুততায় সময় স্থির হয়ে গেছে । অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত মিশে একাকার । সে একাকারে আমাদের স্মৃতিশক্তি ঠাওর করতে পারছেনা ।  হ্যা, আমরা যে সভ্যতায় অবস্থান করছি, সেই সভ্যতারই যান্ত্রিক প্রগতির কথা বলছি ।
মেধা আর শ্রম; এ দুটোর উপরই বর্তমান সভ্যতা অহংকারে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আজকের যে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সেটাও । মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর বা ভিনগ্রহের অন্য কেউ সেই মেধা আর শ্রমের দাবির অধিকার রাখেনা । অর্থ্যাৎ আমাদের মেধা ও শ্রমের সমন্বয়ই হলো আজকের সভ্যতা (যদিও সভ্যতা বলা মোটেও যৌক্তিক নয়, কারণ আজকের দুনিয়ায় সভ্য ও সভ্যতার মধ্যে বিস্তর ফারাক, তবু বললাম বুঝার খাতিরে । বর্তমান সাপেক্ষে সভ্যতার পরিবর্তে যান্ত্রিক প্রগতি বলাই উত্তম) ।
আমাদের মেধা আর শ্রম দিয়েই আমরা কম্পিউটার আবিষ্কার করেছি । ইন্টারনেট আবিষ্কার করেছি । রোবট আবিষ্কার করেছি । এরকম আরো কী কী আবিষ্কার করেছি, তার হিসেব কি দেয়া সম্ভব? অবশ্যই না । প্রয়োজনীয়তার তাগিদে মানুষ নিত্যনতুন কলা-কৌশল আবিষ্কারের নেশায় মত্ত, আবিষ্কার করছেও । কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি উদ্ভাবন অভিযান । কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটাও কেউ জানে না ।
জীবনের অমূল্য সম্পদ হলো সময় । সেই সময়ের যথার্থ ব্যবহার ও সঞ্চয়ের জন্য আমরা কত কিছুই না করেছি এবং প্রতিদিনই করে যাচ্ছি! যানবাহন, অ্যাবাকাস, ক্যালকুলেটর, কম্পিউটার, মোবাইল, ফ্যাক্স, লিফট, স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট এরকম আরো অজস্র কিছু আবিষ্কার করেছি । আবিষ্কার করেও ক্ষান্ত হইনি আমরা । জোরগতিতে চলছে সেগুলোর গতি ও সুবিধা বৃদ্ধি এবং সহজলভ্য হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ ও কার্যক্রম । তাইতো সময়ের প্রেক্ষিতে আমরা দেখেছি এবং দেখে যাচ্ছি এসবের চেইন পরিবর্তনঃ স্লেজগাড়ি থেকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনগাড়ি, বাষ্পীয় ইঞ্জিনগাড়ি থেকে পেট্রোল ইঞ্জিনগাড়ি, বাইসাইকেল থেকে মোটরসাইকেল, বাস-ট্রাক থেকে ট্রেন, ফানুস থেকে এরোপ্লেন, এরোপ্লেন থেকে রকেট, অ্যাবাকাস থেকে ক্যালকুলেটর, ক্যালকুলেটর থেকে কম্পিউটার, আর্পানেট থেকে ইন্টারনেট প্রভৃতি । এতো গেলো সময়কেন্দ্রিক আমাদের প্রচেষ্টার সাফল্য । আর একটু আরাম-আয়েশ আর ভোগবিলাসিতার জন্য আমরা আজ এমন কিছুর আবিষ্কার করেছি যা আমাদের পূর্বপুরুষেরাই তার অর্ধাংশ দেখেনি; আগের রাজ-রাজারা দেখবে তা বহুদূরের প্রসঙ্গ ! খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা সবখানেই লেগেছে আধুনিক থেকে আধুনিকায়নেরর গভীর মনোযোগে তুলির শৈল্পিক ছোঁয়া । সর্বত্রই আজ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির জয়জয়কার সাফল্য । কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, যান্ত্রিক প্রগতির এ সাফল্য শুধুই তার, প্রকৃত অর্থে আমাদের নয়? কেনো নয় তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে, কেনো আমরা যান্ত্রিক প্রগতির সৃষ্টি করেছি? কেনো সেই প্রয়োজনীয়তা? উত্তর হলো সময় বাঁচানো ও জীবনকে সহজ-সরল করা সাপেক্ষে আরাম-আয়েশ-শান্তিতে জীবনকে উপভোগ করা । জানি উত্তরটা সবারই জানা, তবে সেই উত্তরের বোধগম্যতার সাথে গ্রহণযোগ্যতার বলতে গেলে কোনো সম্পর্কই নেই । নেই বলেই আজও আমরা অন্ধের ন্যায় যান্ত্রিক প্রগতির পিছনে অবিরত ছুটে সহজ-সরল জীবনটাকে কঠিনে পর্যবসিত করছি এবং প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি । এতোকিছুর পরেও আমরা না পেরেছি সময় বাঁচাতে, না পেরেছি প্রকৃত অর্থেই শান্তিতে জীবন উপভোগ করতে, বরং আমরা দিনেদিনে আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছি, জীবনযাত্রার ব্যায়ভারও বেড়ে চলেছে সমানতালে । যতোটুকুন প্রয়োজন তার সীমারেখা অতি্ক্রম করে স্বর্গের গন্ধক ফল ছেঁড়ার মতো অপরাধ করে ফেলেছি । সে অপরাধই হয়তো আমাদেরকে যান্ত্রিক প্রগতি কেন্দ্রিক সিস্টেমে নিক্ষেপ করেছে, যেভাবে স্রষ্টা নিক্ষেপ করেছিলো আদমকে এই পৃথিবীর মাঝে । সেই সিস্টেমের মধ্যে থেকে আমরাও পারছিনা নিজেকে যান্ত্রিক প্রগতির কড়ালগ্রাস থেকে ছাড়াতে ।
এভাবে চলতে থাকলে খুব বেশিদূর নয়, যেদিন কলকারখানা থেকে মানুষ শ্রমিককে লাত্থি মেরে বের করে দেবে রোবট সোসাইটি; যেদিন মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডিসপ্যান্সারি, চিকিৎসা গবেষণাগার থেকে ডাক্তার-ফার্মাসিস্টদের মুখে থার্মোমিটার গুঁজে দিয়ে বের করে দিবে মেডিসিন ও সার্জারি প্রোগ্রাম্যাবল কম্পিউটার অর্থ্যাৎ রোবট চিকিৎসক; যেদিন ব্যাংক-বীমা-বিভিন্ন থানা-অফিস-কোর্ট-জেল-হাজত থেকে মানুষ নামক উচ্ছিষ্টদের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করবে প্রোগ্রাম্যবল কম্পিউটার; যেদিন সফটওয়্যার-মেকানিকাল-ইলেকট্রিকাল-রোবটিকাল-অ্যারোনিটিকাল-মাইনিং-শিপইয়ার্ডিং ইঞ্জিনিয়াররা হয়ে যাবে অচল,বেকার; যেদিন মানবশিক্ষকের মূর্তি লুভরের মিউজিয়ামে শোভা পাবে; যেদিন মানুষের কানে, হাতে এককথায় সারা শরীরে সেট করা হবে বায়োমেটালে তৈরি বিভিন্ন ডিভাইস; যেদিন মানুষ পাচ্য খাবারের পরিবর্তে ক্যাপসুল খেয়ে জীবনধারণ করবে; যেদিন মানুষ মেধাশূণ্য অলস-শ্রমহীন-নিস্তেজ হয়ে পড়ে রবে আইসিইউ-তে অথবা শুয়ে শুয়ে ফ্ল্যাট মনিটরে দেখবে অলিম্পিকের বিভিন্ন ইভেন্ট, যেখানে আয়োজক-উদ্যোক্তা-অংশগ্রহণকারী সবাই রোবট । সেদিন খুব দূরে নয়, সীমালঙ্ঘনের কারণেই আমরা মানুষ হবো রোবটের দাস, কাটাতে হবে কঠিন থেকে কঠিনতর ইহলৌকক জীবন; পারলৌকিক জীবনটা না হয় হিসেবের বাইরেই রাখলাম । সৃষ্টির দাস হওয়াটা কি স্রষ্টার কাছে খুব গর্বের?
যদি কেউ এ পর্যন্ত এসে আমাকে প্রশ্ন করেন, এখন কি তার সমাধান নেই? আমি বলবো আছে । প্রাকৃতিক হয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের দ্বিতীয়টি উপায় নেই । প্রাকৃতিক হয়ে যাওয়ার অর্থ এ নয় যে, আপনাকে আমাকে গুহায় গিয়ে গাছের ছালচামড়া বা উলঙ্গ হয়ে দিনাতিপাত করতে হবে । সেরকমটি আমি বলছিও না । কারণ, আমি কেনো, স্বর্গের দেবদূত এসে বললেও পৃথিবীর তাবৎ মানুষ বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির লাগামহীন যান্ত্রিক প্রগতি থেকে একচুল পরিমাণ সরে দাঁড়াবেনা । তাই ওরকমটি ভাবার অবকাশ নেই, বরং প্রাকৃতিক হয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে স্রষ্টার দেয়া জীবনব্যবস্থায় দিনাতিপাত করা । এখানে যেমন ভারসাম্য আছে, তেমনি আছে সীমারেখার চিত্র । এক স্রষ্টার দেয়া জীবনব্যবস্থায় আছে ইহলৌকিক চাওয়া-পাওয়ার সীমারেখা । কারণ যার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন, আর যাই হোক, সে পার্থিব ভোগবিলাসিতায় ডুবে থাকতে পারেনা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর দাস হওয়াতো দুরের কথা । স্রষ্টার দেয়া জীবনব্যবস্থা মেনে নেয়ার কারণে এভাবেই মানুষ যান্ত্রিক প্রগতির হাত থেকে ছুটে তার দৃষ্টিগোচরে প্রকৃতির সাথে ধীরে ধীরে ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে যাবে । তখন না ভয় থাকবে মেধাশূণ্য হয়ে যাওয়ার, না ভয় থাকবে সৃষ্টির দাস হওয়ার । এটাই মানুষের সত্যিকারের প্রাকৃতিক অবস্থা ।

লেখক
ইলিয়াস আহমেদ
১৪.১০.২০১৪ খৃঃ