Thursday, June 4, 2015

সমাধিকারের মেশিনে নারীকে পুরুষীকরণের অপচেষ্টা ও পুরুষবিদ্বেষের নামে মিথ্যাচার

‘আমাদের পরিবার-সমাজ-দেশে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলছে । অন্যায়ভাবে পুরুষদের দ্বারা নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে । তাই নারীদের সমাধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেনা । যতোদিন পুরুষতন্ত্র থাকবে ততোদিন নারীদের শান্তি নেই ।’ কথাগুলোর পুরোটার কপিরাইট একমাত্র প্রগতিশীল নারীবাদীদের । তাঁরা যে ডাহা মিথ্যে বলছেন এমনটিও না ।
সমাধিকারের মেশিনে নারীকে পুরুষীকরণের অপচেষ্টা ও পুরুষবিদ্বেষের নামে মিথ্যাচার
হ্যা, নারীরা পুরুষশ্রেণিটি কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে আসছে । নারী নির্যাতন আজ কোথায় নেই? ঘরে নারীকে দাসীর ন্যায় ব্যবহার করা হয়, যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুর উপর চালানো হয় নির্যাতনের স্টীম রোলার, কোথাও স্বামী আর স্বামীর পরিবার গলা টিপে হত্যা পর্যন্ত করছে । প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ঝলসে দেয়া হচ্ছে সেই মেয়েটির সুন্দর মুখ । রাস্তায় বেরুলেই হায়েনাদের লোলুপ দৃষ্টি-বাক্য-জিহ্বা-হাত থেকে রেহায় পায় না নারী শ্রেণিটি । সাবধানতা আর কতো ! যখন তখন ইভটিজিং-এর শিকার হতেই হয় । যে শিক্ষককে পিতার থেকেও সম্মানী ব্যক্তি মনে হতে তার কাছ থেকেও কিনা রক্ষা পায় না কন্যা সমতুল্য ছাত্রীটি । বাসের ভিড়ে নারীর অঙ্গে প্রতঙ্গে চলে হায়েনার হাতের সুড়সুড়ি, তীক্ষ্ম নখের আঁচড়, চোখ-জিহ্বার ধর্ষণ । নারীদেরকে পুরুষ শ্রেণিটির একাংশ একরকম মানুষই ভাবেনা । কুকুরের কাছে এক টুকরো মাংস যেমন, ঠিক হায়েনা প্রকৃতির পুরুষগুলোর কাছে নারীর অবস্থানও তেমন । এ বৃত্তের বাইরে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতেই হবে । এভাবে চলতে দেয়া যায় না । সমাজ এভাবে চলতে পারে না । এটা অমানবিক, এটা চরম অন্যায় ।

এই শোচনীয় অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রগতিশীল নারীবাদীরা যে উদ্যোগ-আন্দোলন-ব্যবস্থা নিলেন তার সারসংক্ষেপ হলো-
নারীত্বই শোষণ-নির্যাতনের মূলকারণ । যতোদিন নারী নারী হয়ে থাকবে ততোদিন সে অবলা জীব, পুরুষশ্রেণিটির দ্বারা নির্যাতিত হতেই থাকবে । সেজন্যই হয়তো ‘নারীমুক্তি’ নামের সমাসবদ্ধ পদের অবতারণা । তো এই কথা শোনার পর নির্যাতিত নারীরা প্রশ্ন করে বসলো যে, তারা নারীর পরিবর্তে কী হবে? প্রগতিশীল নারীবাদী আন্দোলনকারীরা এইখানে করে বসলো একটা ভুল । মুখে জবাব দিলো নারীকে মানুষ হতে হবে কিন্তু যে দিকনির্দেশনা দিলো সেটা বলে নারীকে পুরুষ হতে হবে । দিকনির্দেশনা দেয়ার আগে মুখে-কলমে-পত্রিকায়-মিডিয়ায় খুব জোরেসোরে পুরুষবিদ্বেষের গীত গাওয়া হলো । পুরুষরা অমুক, পুরুষরা তমুক । পুরুষদের এটা ভালো না, সেটা ভালো না । এক কথায় পুরুষবিদ্বেষ বলতে যা বোঝায় । নির্যাতিত ও ভুক্তভোগী নারীদের মনে পুরুষদের প্রতি চরম ঘৃণা ও বিদ্রোহ জাগিয়ে দেয়া হলো ।

সমাধিকারের মেশিনে নারীকে পুরুষীকরণের অপচেষ্টা ও পুরুষবিদ্বেষের নামে মিথ্যাচার
 তো প্রগতিশীল নারীবাদী আদর্শে যা নির্দেশ দেয়া হলো তা মোটামুটি এরকম-
নারী তুমি আজ থেকেই হাত থেকে চুড়ি বের করে ফেলো, কপালের সিঁদুড় মুছে ফেলো । কারণ ওসব নারীকে পুরুষের করায়াত্ত্ব করার ফ্রেম। আর কতদিন অবলা হয়ে থাকবে? নারীরাও শার্ট-প্যান্ট পড়ে রাস্তায় বেরুবে । শাড়ি-সালোয়ার-ওড়নাকে নিক্ষেপ করা হবে গোঁড়ামির ডাস্টবিনে । হিজাব-বোরকা পড়ার যুক্তিই আসেনা । নারীরা পুরুষের ন্যায় যত্রতত্র যেভাবে খুশি চলাফেরা করবে । প্রয়োজনে নারীরা দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করবে । পুরুষ ধর্ষণ করতে আসলে উল্টো পুরুষকেই ধর্ষণ করা হবে । লম্বা চুল কেটে খাটো করা হবে । অলঙ্কার-সাজ সজ্জার প্রশ্নই আসেনা । জিন্স প্যান্টের সাথে একটা টি-শার্ট পড়ে ক্লাসে যাবে । বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে রাত করে বাড়ি ফিরবে । হাতে একটা সিগারেট থাকলে আরো ভালো হয় । এককথায় পুরুষদের ন্যায় তোমরা সব করবে । কারণ এটাই সমাধিকার । তবে পুরো ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো? নারীদের সমাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গেলে এককথায় তাদেরকে পুরুষ হতেই হবে এবং সে অনুযায়ী কম প্রচেষ্টা চলছেনা । কয়েকদিন পর হয়তো পুরুষ হওয়ার জন্য এ প্রচেষ্টাও চলতে পারে যে, জিম করে স্তন্যযুগল বসিয়ে দিতে হবে । পুরুষের ন্যায় বুক টানটান থাকতে হবে । শারীরিক অবকাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে । সন্তান লালন পালন সুবিধার্থে কোমল ও ভালোবাসায় সিক্ত ত্বক রাখা যাবেনা । মেয়েলি স্বর রাখা যাবেনা । অপারেশন করেই হোক আর অন্য কোনো উপায়েই হোক মেয়েলি স্বর পরিবর্তন করে ছেলেমি স্বর আনতেই হবে ।

ভাবছেন সব নারীই যদি পুরুষ হয়ে যায় তবে আগামী প্রজন্ম উপহার দিবে কে? পৃথিবীতে মানুষ আগমনের ঐতিহ্য ধরে রাখবে কে? এটা নিয়ে সুশীল সমাজের চিন্তা করার কোনো মানেই হয় না । কারণ হলো ফেমিনিজম প্রতিষ্ঠা করতে না করতে দেখা যাবে পুরুষ শ্রেণি সাবেক-পুরুষে পরিণত হয়েছে । ইদানীং কেবলমাত্র আমাদের দেশেই ছেলেদের মাঝে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের যা পরিবর্তন হয়েছে তার জন্য কেউ প্রস্তুত না থাকলেও ১৪০০ বছর আগের আরবের এক যুবক প্রস্তুত ছিলেন । ঐশী দূত প্রাপ্ত তাঁর ভবিষ্যৎবাণীর যথার্থ সত্যায়ন হয়েছে এই যুগে । ছেলেদের সাজসজ্জা, আচার-আচরণ, চিন্তাভাবনা মেয়েদের হার মানিয়েছে অনেক আগেই । তাদের মাঝে মেয়েলি ভাবের যা প্রকাশ পেয়েছে তা বলতে সত্যিই লজ্জা লাগছে । এখনকার যুগে যে ছেলে যতো বেশি মেয়ে প্রকৃতির তাকে ততোটাই পছন্দ করে মেয়েরা । করবেনা কেনো? নারী-পুরুষের মধ্যে আকর্ষণের বিষয়টাই হলো বৈপরিত্যে । তাছাড়া ইতোমধ্যে প্রগতিশীল নারীবাদ মতাদর্শে আদর্শিত হয়ে মেয়েদের সাজসজ্জা, আচার-আচরণ, চিন্তাভাবনায় পুরুষীকরণ সেঁটে আছে । এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আজকের পুরুষজাতি ঘর-চুলা-সন্তান সামলানোর দায়িত্ব নিবে আর মেয়েরা নেবে ঐসব ব্যতীত, যা থাকে তা । এখন চলছে পুরুষতন্ত্র তখন চলবে নারীতন্ত্র । এখন নারীরা পুরুষদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে তখন পুরুষরা নির্যাতিত হবে নারীদের দ্বারা । এখন নারীরা আন্দোলন করছে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, তখন পুরুষরা আন্দোলন করবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে । আজ আন্দোলন করছে প্রগতিশীল নারীবাদীরা তখন আন্দোলন করবে প্রগতিশীল পুরুষবাদীরা । হিসেব তো ঘুরে ফিরে একটাই । দুর্বলদের প্রতি সবলদের অত্যাচার । সার্বিক সমস্যা অনুযায়ী সমাধানস্বরূপ গৃহীত ব্যবস্থা-উদ্যোগ-আন্দোলন কতটুকুন সফল হবে? এটা কি দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়?

স্ববিরোধিতা ও পুরুষবিদ্বেষের নামে মিথ্যাচার

মুখে চলছে পুরুষবিদ্বেষী আর কাজে-কর্মে পুরুষকেই আদর্শ (স্ট্যান্ডার্ড) ধরেই চলছে সমাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা । এ যেনো দুমুখো সাপ । সমাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যদি পুরুষই হতে হবে তবে কেনো এই পুরুষবিদ্বেষের নামে মিথ্যাচার? পুরুষদেরকে আদর্শ হিসেবে ধরে প্রগতিশীল নারীবাদীদের এই সমাধিকার প্রচেষ্টা কি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পুরুষজাতিটির উগ্রতা, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারপ্রিয়তা উসকে দিচ্ছেনা? প্রগতিশীল নারীদের এমন দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকান্ড এটাই বলে যে, নারীত্বকে তারা অভিশাপ আর পুরুষত্বকে আশীর্বাদ হিসেবে নিচ্ছে । নিজের সত্তাকে অস্বীকার করে পুরুষ হওয়ার অদম্য চেষ্টায় মেতে উঠেছে । কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঠিক এমন একটা ভুল করেছিলেন । তিনি বাঙ্গালি কবি হয়েও ইংরেজি সাহিত্যের কদর ও সম্মান দেখে ইংরেজি সাহিত্যে মনোনিবেশ করলেন । কয়েকটা ইংরেজি কবিতার বইও প্রকাশ করে ফেললেন । কিন্তু যে নিজের প্রকৃত সত্তা হারিয়ে অন্যের ছাল-চামড়ায় নিজেকে আবৃত করতে চায় তার কপালে লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিইবা জোটে? হতাশ আর তিক্ত অভিজ্ঞতার পর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিজের ভুল বুঝতে পেরে বাংলা সাহিত্যে মনোনিবেশ শুরু করেন এবং তিনি বাংলা সাহিত্যে কতটুকুন সফল হতে পেরেছেন তা এদেশের মানুষের কাছে তার লেখা সনেট কবিতার জনপ্রিয়তা দেখেই ঠাওর করা যায় । বাংলা কবিতার জগতে এক নক্ষত্রের নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত । নারীর সমাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রগতিশীল নারীবাদীরা কি মধুসূদন দত্তের ন্যায় একই ভুল করছেন না? তবে কি লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে, নারী নির্যাতন রোধে কোনো আন্দোলন করা ঠিক না, যুক্তি নেই? না, লেখক এমনটি বলছেন না । বরং এ আন্দোলন অবশ্যই প্রয়োজন । আন্দোলন ছাড়া বিপ্লব সম্ভব না । আর বিপ্লব ছাড়া কোনো কিছু প্রতিষ্ঠা করা যায় না । নারীদের উপর পুরুষদের নির্যাতন, বৈষম্যনীতির প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে । কিন্তু প্রগতিশীল নারীবাদীরা কারণ খুঁজতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন । তাই দোষটা পড়লো গিয়ে পুরুষজাতিটির উপর । প্রচন্ড পরিমাণ পুরুষবিদ্বেষী পুষে পুষে পুরুষজাতিটিকে প্রতিযোগী হিসেবে গ্রহণ করলো, সহযোগী হিসেবে নয় । যুদ্ধ ঘোষণা করা হলো । প্রতিপক্ষ পুরুষ জাতি । যুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্যই নারীর পুরুষীকরণ মনোভাব সৃষ্টির কারণ হিসেবে ধরে নেয়া যায় ।
 বেগম রোকেয়া ও নারী জাগরণবেগম রোকেয়ার নারী জাগরণ আন্দোলনের সাথে বর্তমান প্রগতিশীল নারীবাদীদের সমাধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের এখানেই রয়েছে বিস্তর ফারাক । বেগম রোকেয়া পুরুষকে সহযোগী হিসেবে নিয়েই সমাজ-রাষ্ট্র থেকে নারী জাগরণ, নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি সমাধিকারের চাইতে মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়েছেন । এই প্রভাবটা তাঁর বাস্তবজীবনেও দেখা যায় । তিনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই পুরুষদেরকে দেখিয়েছেন নারীদের সম্মান-মর্যাদা-গুরুত্ব আসলে কত বেশি । নারীদের বন্দীজীবন ও প্রচলিত পর্দাপ্রথা থেকে বেরিয়ে তিনি বিকিনি পরিহিত সূর্যস্নান তত্ত্ব গ্রহণ করেন নি । মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন । আজীবন যাঁকে শাড়ি পরিহিতা এক বিদুষী নারী হিসেবে আমরা দেখতে পাই । শালীনতার কোথাও কমতি ছিলো না ।

সমাধিকার নাকি মানবাধিকার?

আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবেনা, সমাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে নারীকে পুরুষীকরণ প্রচেষ্টার পেছনে অবশ্যই একটা মহৎ স্বার্থ রয়েছে । সেটা হলো নারীর উপর পুরুষের শোষণ-নির্যাতন-বৈষম্য দূরীকরণ । প্রগতিশীল নারীবাদীরা তো ধরেই নিয়েছেন সমাধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই নারীরা পুরুষকর্তৃক সকল অন্যায়-শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে । সত্যিকারার্থে নারীর কোনটার প্রয়োজন বেশি? সমাধিকার নাকি মানবাধিকার? সমাধিকার যদি ধরা হয় তবে নারীদের উপর জুলুম করা হয়, এমনকি পুরুষদের উপরেও । জুলুম এ কারণে যার সহ্য বা ধারণ ক্ষমতা যতোটুকু তার উপর তারচেয়ে বেশি কিছু চাপিয়ে দিলে সেটাই জুলুমে পরিণত হয় । যেমন- একজন নারীকে যদি সমাধিকারের দোহায় দিয়ে বলা হয় তুমি পুরুষের ন্যায় সারাদিন রোদ-বৃষ্টিতে পুড়ে ফসল উৎপন্ন করে সেই ফসল বাজারে বিক্রি করে বাসায় খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনো । এটা নারীর জন্য জুলুম । কারণ তার ত্বক ও শক্তি সে কাজের জন্য উপযুক্ত না । আবার সমাধিকারের দোহায় দিয়ে পুরুষকে বলা হয় তুমি নারীর ন্যায় গর্ভবতী হয়ে, নিজের স্তন্যের দুধ প্রদান করে বাচ্চা লালন পালন করো । এটাও পুরুষের জন্য জুলুম । কারণ পুরুষের ত্বক ও দেহ সে কাজের জন্য উপযুক্ত নয় । অর্থ্যাৎ সমাধিকার পুরোটাই একটা জুলুম । মানুষের সহজাত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধে অবস্থান । সমাধিকার শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতাই ডেকে আনতে পারবে । লিঙ্গভেদে পরস্পর এ দ্বান্দ্বিক লড়াই জীব সংরক্ষণের জন্য মোটেই সুবিধাজনক নয় । উত্তর প্রজন্ম হারানোর সাথে সাথে হারিয়ে যেতে পারে মানুষ নামের শব্দটি । নারীর প্রতি অসম্মান-শোষণ-নির্যাতনের প্রভাব কেবল নারীতে সীমাবদ্ধ নয়, সমাজ-রাষ্ট্র সর্বত্রে প্রভাব ফেলে । সমাধিকারের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানবাধিকার । নারী-পুরুষের স্ট্যান্ডার্ড হবে মানুষ, পুরুষ নয় । নারীতন্ত্র নয়, পুরুষতন্ত্র নয়, প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানবতা । যেসব পুরুষ নারীদের উপর নির্যাতন-শোষণ-অন্যায় করছে তাদের পরিচয় হবে কাপুরুষ, হায়েনা । আর এই কাপুরুষদের প্রতিহত করবে পুরুষশ্রেণিটি । সব পুরুষই হায়েনা নয়, এদের মধ্যেও আছে রবি-নজরুল-মুজিব-জিয়া । নারীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার মতো আছে সাখাওয়াত হোসেনের মতো বীর পুরুষ । ধর্ষণের জন্য যেমন কাপড়কে সরাসরি দায়ী করা যায় না, তেমনি নারীর উপর নির্যাতনের পেছনে নারীত্বকে দায়ী করা যায় না । নারীত্ব কোনো দুর্বলতার নাম নয়, সৃষ্টির নাম নারী । তেঁতুলতত্ত্বকে মুখে অস্বীকার করে আবার তেঁতুলতত্ত্ব মেনে নিয়েই পুরুষীকরণ প্রচেষ্টা স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছুই না । হারিয়েছে মানবতা, লঙ্ঘিত হয়েছে মানবাধিকার । সেজন্যই দুর্বলেরা আজ সবল কর্তৃক নির্যাতিত । ভারসাম্য হারিয়ে বিশৃঙ্খলায় পতিত হয়েছে ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার মানদন্ড । তাই সমাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতে হবে । আপনসত্ত্বা সংরক্ষণ করা সাপেক্ষে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করলে কারো উপর জুলুম হয় না । নারী তার নারীত্ব নিয়ে অহংকার করবে । প্রচলিত পর্দাপ্রথা পরিত্যাগ করে নারী পৃথিবীতে মাথা উচু করে ঘোষণা দিবে -
যুগ যুগ ধরে আমি নারী, আমি মা । আমি জন্ম দেই পুরুষকে । পুরুষের বীরত্বের পেছনে একচ্ছত্র আমার অবদান । আমার প্রেরণা, আমার উৎসাহ পুরুষকে করে বীর । যতো বিপ্লব, যতো যুদ্ধ, যতো বীরত্ব সবকিছুর মূলে আমি নারী তোমাকে করেছি সাহায্য । আমাকে ছাড়া তোমরা পুরুষ অর্থহীন, বেমানান । আমি নারী শান্তির প্রতীক । নারীই তোমাদের সুখের ঠিকানা । তাই বারবার আমারই ছায়াতলে তোমাদের নিতে হয় আশ্রয় । আবার আমারই ইশারায় তলিয়ে গেছে কত সভ্যতা । আমি ইশারায় করি রাজত্ব আর তোমরা সে রাজ্যের যোদ্ধা ।

লেখক
ইলিয়াস আহমেদ
৩.০৬.২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ

0 comments:

Post a Comment